কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন এর নিবন্ধন এর কাজ চলছে তারেক আইটিতে।।।
অনলাইনে নিবন্ধন
জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম জানান, করোনাভাইরাসের টিকা পেতে আগ্রহীরা সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে গিয়ে অথবা মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধনের কাজটি সারতে পারবেন।
‘রিয়েল টাইম’ অ্যাপটি ফ্রি ডাউনলোড করা যাবে। নিবন্ধনের পর সেখান থেকেই জানা যাবে, কবে কখন টিকা নিতে হবে।

পরিচয় যাচাইয়ে এই অ্যাপ্লিকেশনে ১৮টি শ্রেণি করা হয়েছে, যার একটি সিলেক্ট করার পর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে নিবন্ধন শুরু করতে হবে। এই ১৮টি শ্রেণির মধ্যে রয়েছে নাগরিক নিবন্ধন, সরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী; অনুমোদিত সকল বেসরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা-কর্মচারী; প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত সকল সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা কর্মকর্তা-কর্মচারী; বীর মুক্তিযোদ্ধা; সম্মুখসারির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য; সামরিক ও আধা সামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয়ের কর্মীরা।
এছাড়া রয়েছেন সম্মুখসারির গণমাধ্যমকর্মী; নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি; সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সম্মুখসারির কর্মকর্তা-কর্মচারী; ধর্মীর প্রতিনিধি (সকল ধর্ম); মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ব্যক্তি; বিদ্যৎ, পানি, গ্যাস, পয়ঃনিস্কাশন ও ফায়ার সার্ভিসের মত জরুরি সেবার সম্মুখসারির কর্মী; রেল স্টেশন, বিমান বন্দর ও নৌ বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী; জেলা ও উপজেলায় জরুরি জনসেবায় সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যাংক কর্মী ও প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক।
জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর যাচাই করে সব ঠিক থাকলে স্ক্রিনে নিবন্ধনকারীর নাম দেখানো হবে বাংলা ও ইংরেজিতে। সেখানে একটি ঘরে একটি মোবাইল ফোন নম্বর চাওয়া হবে, যে নম্বরে তাকে পরে টিকাদান সংক্রান্ত তথ্য এসএমএস করা হবে।
মোবাইল নম্বর দেওয়ার পর একটি ঘর পূরণ করতে হবে, যেখানে জানাতে হবে নিবন্ধনকারীর দীর্ঘমেয়াদী রোগ বা কো মরবিডিটি আছে কি না, থাকলে কোন কোন রোগ আছে।
সেখানে আরেকটি ঘরে জানাতে হবে পেশা এবং তিনি কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কাজে সরাসরি জড়িত কি না।
তারপর বর্তমান ঠিকানা ও কোন কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে ইচ্ছুক তা সিলেক্ট করতে হবে। সব শেষে ফরম সেইভ করলে নিবন্ধনকারীর দেওয়া মোবাইল নম্বরে পাঠানো হবে ওটিপি। সেই ওটিপি কোড দিয়ে ‘স্ট্যাটাস যাচাই’ বাটনে ক্লিক করলে নিবন্ধনের কাজ শেষ হবে।
নিবন্ধন হয়ে গেলে টিকার প্রথম ডোজের তারিখ ও কেন্দ্রের নাম এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এরপর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্ম তারিখ দিয়ে লগ ইন করে এসএমএস এর মাধ্যমে পাওয়া ওটিপি কোড দিয়ে টিকা কার্ড ডাউনলোড করতে হবে।
এসএমএস এ যে তারিখ দেওয়া হবে, সেই তারিখে টিকা কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে কোভিড-১৯ এর টিকা নিতে পারবেন নিবন্ধনকারীরা।

কোভিড-১৯ টিকাদানের কার্ডটি হবে এমন। এভাবে দুটি ডোজ শেষ হলে সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন থেকে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির সনদ সংগ্রহ করা যাবে।
যাদের ইন্টারনেট সুবিধা বা অ্যাপ ব্যবহারের মত ডিভাইস নেই, তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে জিয়াউল আলম বলেন, “আগ্রাহীদের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে ফ্রি নিবন্ধন করার সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।”
চলছে তালিকা তৈরি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর জেলায় জেলায় টিকার জন্য তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, উপজেলা পর্যায় থেকে তালিকা পাওয়ার পর সিভিল সার্জন জেলার সব তালিকা সমন্বয় করছেন।
“সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তালিকা প্রস্তুত করে রাখা হবে। আমরা জেলায় যে পরিমাণ ভ্যাকসিন পাব, তালিকা অনুসারে সিভিল সার্জন টিকা দেওয়ার অস্থায়ী যে বুথ করবেন, সেখান থেকে দেওয়া হবে।”
লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সামনে থেকে সরাসরি যারা কাজ করছেন, তাদের অগ্রাধিকারে রেখে তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২১ জানুয়ারি একটি সার্কুলারে সব ব্যাংক কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর জরুরি ভিত্তিতে একটি ই-মেইল নম্বরে পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে।
জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর তালিকা তৈরির কাজ করছে।
টিকার তালিকায় তৈরি পোশাক শ্রমিকদেরও অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক।
তিনি বলেছেন, বিজিএমইএর সদস্যদের টিকা তারা বেসরকারিভাবে নেওয়োর চেষ্টা করছেন। তবে শ্রমিকদের জন্য সরকারিভাবে টিকা দেওয়া গেলে ‘খুবেই ভালো হয়’।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনাভাইরাসের টিকার প্রাপ্যতা অনুযায়ী মাসভিত্তিক বিতরণ তালিকা তৈরি করেছে। সেখানে প্রথম ফেইজের প্রথম স্টেইজে মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ, অর্থাৎ ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ভারত সরকারের উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজ টিকা বাড়তি পাওয়ায় প্রথম মাসে ৭০ লাখ টিকা হাতে আসার কথা। সেখান থেকে ৬০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হবে; পরের মাসে দেওয়া হবে ৫০ লাখ ডোজ।
প্রথম মাসে সবার আগে টিকা পাবেন ৪ লাখ ৫২ হাজার ২৭ জন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী। এছাড়া কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য সেবায় সরাসরি নিয়োজিত অনুমোদিত সব বেসরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের ছয় লাখ স্বাস্থ্যকর্মী প্রথম ধাপেই টিকা পাবেন।
টিকা অগ্রাধিকার তালিকায় আছেন ২ লাখ ১০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা, সামরিক ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৫৭ জন, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ২৫ হাজার জন, সম্মুখসারির ২৫ হাজার জন গণমাধ্যমকর্মী, ৮৯ হাজার ১৪৯ জন জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার ৭৫ হাজার জন কর্মচারী, মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত কর্মীদের মধ্যে ৩৭ হাজার ৫০০ জন।
এছাড়া পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পয়োনিষ্কাশন, ফায়ার সার্ভিস এবং বিমানবন্দরের ২ লাখ কর্মী, স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের ৭৫ হাজার জন, ৬০ হাজার প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক, জেলা-উপজেলায় জরুরি জনসেবায় নিয়োজিত ২ লাখ সরকারি কর্মচারি এবং ফুটবল,
হকি, ক্রিকেট মিলিয়ে জাতীয় দলের ১০ হাজার ৯৩২ জন খেলোয়াড় প্রথম মাসেই টিকা পাবেন।
বাফার, ইমার্জেন্সি, আউটব্রেক মোকাবেলায় প্রথম মাসে ৭০ হাজার ডোজ টিকা সংরক্ষণে রাখার কথা বলা হয়েছে পরিকল্পনায়।
No comments